সাংবাদিক ও শহীদ-সন্তান প্রবীর সিকদারকে চালাকি করে গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিক্রিয়া খানিকটা থিতিয়ে এসেছে। এসময় দেখে নেয়া যাক প্রবীরকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের একটি প্রায় সামষ্টিক ব্যর্থতা।
১৬ অগাস্ট গ্রেফতার হওয়া প্রবীর ১৯ অগাস্ট জামিনে মুক্তি পান। গ্রেফতারের পরদিন হাতকড়া পরিয়ে ফরিদপুর আদালতে হাজির করা হয়েছিল শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রবীর সিকদারকে।

সেই ছবি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ভেসে গিয়েছিলো ফেইসবুক। অসংখ্য ফেইসবুকার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রবীরকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করার ঘটনায়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার চলতে থাকা জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং প্রবীরের দুটি ছবিও প্রচার হচ্ছিল ফেইসবুকে।
এতে দেখা গেছে, যুদ্ধাপরাধী নিজামীর আদালেত হাজিরার একটি মুহূর্ত। সেখানে তাকে হাতকড়া পরানো হয়নি। বরং তার গায়ে যেন রোদ না লাগে সেজন্য তার মাথারও ওপর ছাতা ধরে আছে এক পুলিশ সদস্য।
প্রবীরকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজিরের এই বেআইনী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের প্রায় সবকটি সংবাদমাধ্যমের নজর এড়িয়ে গেছে। ব্যতিক্রম শুধু দৈনিক প্রথম আলো। ১৯ অগাস্ট পত্রিকাটি তার প্রথম পৃষ্ঠার অষ্টম কলামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘হাতকড়া কেন!’ শিরোনামে।
কোনো আসামিকে হাতকড়া পরানোর আইনি ব্যাখ্যাও দেয়া হয় ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, “হাতকড়ার ব্যবহার নিয়ে আইন আছে পুলিশ প্রবিধান বা পিআরবিতে। ওই বিধির ৩৩০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘…বিচারাধীন বন্দীকে তাহাদের পলায়ন বন্ধ করিবার জন্য যাহা প্রয়োজন তাহার চাইতে বেশি কড়াকড়ি করা উচিত নহে। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় এবং অমর্যাদাকর। বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাহাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ তাহাদের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করা উচিত হইবে না।’”
প্রবীর সিকদারকে হাতকড়া পরানো নিয়ে দেশের মানুষের বক্তব্যও ছিল তাই। ফেইসবুকাররাও বলছিলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী একজন মানুষ যার একটি পা নকল তিনি কি আদালত চত্বর থেকে দৌড়ে পালাবেন যে তাকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নিতে হবে?
দেশের মানুষের অনুভূতিকে ধরতে পেরে সে অনুযায়ী সময়োপযোগী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একমাত্র প্রথম আলোই। একইসঙ্গে তারা প্রতিবেদনে যুক্ত করে হাতকড়া পরানোর আইনি ব্যাখ্যাও। এজন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।